Mail :
info@bsehr.org
Call Us :
+8801323748172

Human Rights Reports

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ফেব্রুয়ারী ২০১৭

ফেব্রুয়ারীতে দেশে ৩৩ আত্মহত্যা ২৬ শিশু হত্যা ও ক্রস ফায়ারে নিহত ১৯ জন

 

ফেব্রুয়ারী মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। সংস্থার মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এ চিত্র সামনে আসে। পারিবারিক ও সামাজিক নিশংসতার বিষয়টি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা উদ্বেগজনক। শিশু হত্যা, শিশু ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ,পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আাহত ও নিহত, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলি ছিল উল্লেখযোগ্য এ মাসে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ফেব্রুয়ারী মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:

আত্মহত্যা ঃ ফেব্রুয়ারী মাসে আত্মহত্যা করেছে ৩৩ জন । এদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও ২১ জন নারী ও ১ জন শিশু। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানী, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোষাক কিনতে না পারার কারনেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় ।

ক্রস ফায়ারে নিহত ঃ ফেব্রুয়ারী মাসে ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয় ১৯ জনের, এর মধ্যে পুলিশের হাতে নিহত হয় ১৬ জন এবং র‌্যাব কর্তৃক নিহত ২ জন ও যৌথ বাহিনীর হাতে ১ জন। তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ৩ জন। আহত হয় ২ জন ।

ধর্ষণ ঃ ফেব্রুয়ারী মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৯ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ১৫ জন। ১০ জন নারী। ২ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হয় , ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২ জনকে। এ মাসে খুলনায় ঘরে আটকে রেখে এক কিশোরীকে গণধর্ষন করে তার কথিত প্রেমিক ও তার বন্ধুরা। রাজধানীর রামপুরায় নয় বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।

শিশু হত্যা ঃ ফেব্রুয়ারী মাসে ২৬ শিশুকে হত্যা করা হয় । এদের মধ্যে পিতা মাতার হাতে খুন হয় ৩ শিশু। পারিবারিক কলহের জের ধরে ৫ বছরের সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করে শিশুটির পিতা । এ মাসেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে অপহরনের পর দুই শিশুকে হত্যা করে প্রতিবেশী। পারিবারিক কলহের কারনে ছোট তিন ভাই বোনকে হত্যা করে আপন বড় ভাই।

যৌতুকঃ ফেব্রুয়ারী মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ৪ জন নারীকে । নির্যাতনের শিকার হয় ৪ জন। কুষ্টিয়াতে যৌতুকের দাবীতে স্বামীর দেয়া আগুনে আহত হয় গৃহবধূ লাইলি বেগম । বগুড়ায় যৌতুক লোভী স্বামী ছেলে মেয়ের সামনে কুপিয়ে আহত করে গৃহবধূ হাসিকে।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে ফেব্রুয়ারী মাসে নিহত হন ১৪ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ৮ জন ,নারী ৬ জন।। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ৯ জন নারী। আর স্ত্রীর হাতে নিহত হন ৩ জন স্বামী । পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

সামাজিক অসন্তোষ ঃ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ৫ জন ! আহত হয়েছেন ৮৬৭ জন। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ।

খুন ঃ ফেব্রুয়ারী মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৭৬ জন । ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়ার বসবায় ফরিদ মিয়া নামে এক কারিগরের গলা কাটা লাশ উদ্ধার কওে পুলিশ। মুন্সিগঞ্জে গজারিয়ায় দুই মাদক ব্যবসাযীর মদ্যে সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত।

অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা- ফেব্রুয়ারী মাসে ২ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ৮ জন, আহত হয় ২৭ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ২৩৯ ও আহত ৫০৬ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ৪১ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৪ ,আহত হয় ১৪ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৫ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গনগ্রেফতার করা হয় ৩৩৯ জনকে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষন ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, মিডিয়ায় এসব পরীক্ষামূলক সম্প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৮৮ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। তার মধ্যে প্রতি মাসে আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা হয় । উল্লেখ্য এ মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষনা তথ্য মোতাবেক এসকল ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত ও নিহত) হয় মোট ২৪৮৭ জন নারী , পুরুষ ও শিশু। এর মধ্যে আহত ১৬২৭ ও নিহত ৮৬০ জন।

(তথ্য সুত্রঃ ফেব্রুয়ারী ২০১৭ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি)

 

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানুয়ারী ২০১৭

জানুয়ারীতে দেশে আতহত্যা ২৯, ২৬ শিশু হত্যা ও ধর্ষণের শিকার ২৭ জন নারী-শিশু

জানুয়ারী মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। সংস্থার মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এ চিত্র সামনে আসে। পারিবারিক নিশংসতার বিষয়টি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা উদ্বেগজনক। শিশু হত্যা, শিশু ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ,পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আাহত ও নিহত, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলি ছিল উল্লেখযোগ্য এ মাসে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জানুয়ারী মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:

শিশু হত্যা ঃ জানুয়ারী মাসে ২৬ শিশুকে হত্যা করা হয় । এদের মধ্যে পিতা মাতার হাতে খুন হয় ৩ শিশু। তাছাড়া এ মাসে নির্যাতনের শিকার হয় ২৬ জন শিশু। কক্স্রবাজারে পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনার জেড়ে আট বছরের এক শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করে আপন ফুফা। পারিবারিক কলহের কারনে রাজধানীতে দুই শিশুকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করে এক মা।

আত্মহত্যা ঃ জানুয়ারী মাসে আত্মহত্যা করেছে ২৯ জন । এদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী ও ৯ জন শিশু। হঠাৎ করেই বেড়ে যাচ্ছে শিশুদের আত্মহত্যার প্রবনতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানী, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোষাক কিনতে না পারার কারনেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় । লক্ষীপুরে মায়ের সঙ্গে অভিমান করে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী আতœহত্যা করে এ মাসে।

ধর্ষণ ঃ জানুয়ারী মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৭ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ১৩ জন। ৮ জন নারী। ৬ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হয় । কুমিল্লায় চিকিৎসা সেবা নিতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় এক প্রতিবন্ধী নারী। তাছাড়া ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে এক যুবক।

যৌতুকঃ জানুয়ারী মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ১০ জন নারীকে । নির্যাতনের শিকার হয় ৭ জন। রাজবাড়ীতে যৌতুকের দাবিতে অন্তঃসত্বা স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার হ্যাপিকে পিটিয়ে ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী। চট্টগ্রামে যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূকে হত্যা করে শ্বশুরবাড়ীর লোকজন।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে জানুয়ারী মাসে নিহত হন ২৯ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১৩ জন ,নারী ১৬ জন।। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৬ জন নারী। আর স্ত্রীর হাতে নিহত হন ৩ জন স্বামী । পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

ক্রস ফায়ারে নিহত ঃ জানুয়ারী মাসে ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয় ১২ জনের, এর মধ্যে পুলিশের হাতে নিহত হয় ৯ জন এবং র‌্যাব কর্তৃক নিহত ৩ জন । তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ৩ জন। আহত হয় ৪ জন ও ৪ জন বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্ত বাহীনি।

সামাজিক অসন্তোষ ঃ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ১১জন ! আহত হয়েছেন ৫৮১ জন। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে । মাত্র ১০ টাকা বাস ভাড়াকে কেন্দ্র করে ব্রাক্ষ্রণবাড়ীয়াতে আহত হয় ৫০ জন। সুনামগঞ্জে পূর্ব বিরোধের জেড়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয় ২ জন।

খুন ঃ জানুয়ারী মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৮৯ জন । গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনের আওয়ামীলীগ এমপি মুঞ্জুরুল আলম লিটন র্দূবৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়। খুলনায় ঘরের মধ্যে হাত পা বেঁধে মাথায় আঘাত করে এক কলেজ শিক্ষককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা- জানুয়ারী মাসে ৩ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ১০ জন, আহত হয় ৩ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ১৯৯ ও আহত ৩৮০ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ৫৮ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ২ ,আহত হয় ১৫ জন। বোমা বিস্ফোরনে আহত ৮ জন, নিহত হয় ২ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৭ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গনগ্রেফতার করা হয় ৩৭৮জনকে। এ মাসে নিখোজ হয় ২০ জন ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষন ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, মিডিয়ায় এসব পরীক্ষামূলক সম্প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৮৮ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। তার মধ্যে প্রতি মাসে আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা হয় । উল্লেখ্য এ মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষনা তথ্য মোতাবেক এসকল ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত ও নিহত) হয় মোট ২২২৬ জন নারী , পুরুষ ও শিশু।

(তথ্য সুত্রঃ জানুয়ারী ২০১৭ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি)

 

প্রেস রিলিজ

ডিসেম্বর ২০১৬

২০১৬ সালের বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বস্তবায়ন সংস্থার প্রতিবেদন

= খুন ১০৫২, শিশু হত্যা ১৯৭, গণধর্ষণ ৭৭ ও ক্রস ফায়ারে মৃত্যু ১৫৭ জন =

২০১৬ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় মোট ৪২৮৪০ জন আহত ও নিহত হয়েছে । দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির বিশেষ কোন পরিবর্তন হয়নি বরং কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি গত বছরের তুলণায় আরোও উদ্বেগজনক বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। শিশু হত্যা ও নির্যাতন ছিল পুরো বছর জুড়েই। পারিবারিক কোন্দলে আাহত ও নিহতের সংখ্যাও এই বছর তুলনামূলক বেশী। নারী নির্যাতন, আতœহত্যা পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা, কথিত ক্রস ফায়ারে মানুষ হত্যার ঘটনাগুলো এ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে । মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় বাড়ছে যা দেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ২০১৬ সালের, গবেষনা সেলের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়,

শিশু হত্যা ও নির্যাতনঃ বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ২০১৬ সালেই শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশী। এ বছর ১৯৭ জন শিশুকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। আর নির্যাতনের শিকার হয় ১৯৯ জন শিশু। ফেব্রুয়ারিতে হবিগঞ্জের সুদ্রাটিকি গ্রাম থেকে রহস্যজনক ভাবে নিখোজ হয় ৪ শিশু,পরবর্তীতে তাদের লাশ মাটিচাপা অবস্থায় পাওয়া যায়। এপ্রিলে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে শিশুকন্যাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে মা । আগষ্টে রাজধানীর বাসাবো এলাকায় নিজ বাসায় দু ছেলে মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে মা। বিশেষ করে মা বাবার হাতে সন্তান হত্যার বিষয়টি বেশ আলোচিত হয় ২০১৬ সালে।

ধর্ষনঃ ২০১৬ সালে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০৭ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে ১৪১ জন নারী ধর্ষিত হয়, গণধর্ষণের শিকার হয় ৭৭ জন ও ধর্ষনের পর হত্যা করা হয় ৩৩ জনকে। এ বছর ১৫৬ জন শিশু ধর্ষিত হয়। ফেব্রুয়ারীতে পিরোজপুরে শিরিন আক্তার নামের এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষনের পর হত্যা করা করে দুর্বৃত্তরা। এপ্রিলে লক্ষীপুরে গণধর্ষণের শিকার হয় দুইবোন। সিরাজদীখান উপজেলার বারুচর ইউনিয়নে ধর্ষণের শিকার হয় এক গৃহবধূ। আগষ্টে গাজীপুরে ৮ মাস বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করে ৪০ বছর বয়সী এক পাষন্ড। নভেম্বরে রংপুর নগরীর নার্র্সিং ইনস্টিটিউটের দুই ছাত্রীকে গণর্ষণের অভিযোগ ওঠে।

যৌতুকঃ ২০১৬ সালে যৌতুকের জন্য প্রাণ দিয়েছেন ৬১ জন নারী এবং যৌতুকের কারনে আহত হয় ৯৪ জন নারী । এ আধুনিক যুগে এসেও যৌতুকের কারনে নারী নির্যাতন ও হত্যার বিষয়টি বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি করে জনমনে। ফেব্রুয়ারিতে মুন্সিগজ্ঞের গৃহবধূ রাশিদা বেগমকে যৌতুকের কারনে ব্লেড দিয়ে কেটে রক্তাক্ত করে স্বামী ও দেবর। মে মাসে নারায়নগঞ্জে স্বামী শ্বশুরের দাবিকৃত যৌতুক বাবদ অটোরিক্স্রা না দেয়ায় লাকি আক্তার নামে এক নববধূকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ফেনীতে যৌতুকের দাবীতে এক গৃহবধূকে হত্যা করে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। যৌতুক দিতে না পারায় নারায়নগঞ্জে ফাতেমা বেগম নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

পারিবারিক কলহঃ চলতি বছর বেশ কিছু পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা অলোচিত হয়েছে। পারিবারিক কলহে ২০১৬ সালে নিহত হয় ৩৮৪ জন ও আহত হয় ৩১৩ জন। এর মধ্যে নারী নিহত ২৯১ জন ও আহত ২১৭ জন। ফেব্রুয়ারিতে পারিবারিক কলহের জের ধরে বেয়ালমাড়িতে ভাইয়ের হাতে খুন হন বোন। তাছাড়া পাবনায় পারিবারিক কলহের কারনে এক মা ও তার সন্তানের বিষ পানে মৃত্যু হয়। সেপ্টেম্বরে ফরিদপুরে নতুন মডেলের মোটর সাইকেল না পেয়ে নিজের মা বাবার শরীরে আগুন দিয়েছে এক সন্তান পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয়।

খুনঃ ২০১৬ সালে সারা দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ১০৫২ জন ও আহত হয় ৮৩৯ জন। ফেব্রুয়ারি তে পঞ্চগড়ে মঠ পূজারীকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়। মে মাসে টাঙ্গাইলে নিখিল জোয়ার্দার নামে এক দর্জিকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা । এ মাসেই বান্দরবনে এক বয়স্ক বৌদ্ধকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা । জুন মাসে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আব্দুল বারেক সরদার কে নিজ ঘরে গলা কেটে হত্যা করে দুবৃত্তরা । তাছাড়া দিনে দুপুরে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুকে নির্মম ভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গীরা। অক্টোবরে রাজধানীর বনানীতে একটি বহুতল ভবনে ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যাপককে হাত পা বেঁধে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা ।

ক্রস ফায়ারে নিহতঃ ২০১৬ সালে কথিত ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ১৫৭ জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ৯৬ জন, র‌্যাব কর্তৃক ৫৬ জন ও অন্যান্য বাহিনী কর্তৃক ৫জন। পুলিশ ও জেল হেফাজতে মৃত্যু হয় ৪৪ জনের ।

আত্মহত্যাঃ এ বছর আত্মহত্যা করেছে মোট জন ৫১৪। এদের মধ্যে ১৭৮ জন পুরুষ ও ৩৩৬ জন নারী। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা ও যৌন হয়রানীর কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

সামাজিক অসন্তোষঃ প্রলম্বিত বিচার পদ্ধতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এই সবকিছু মিলেই দেশের আপামর জনসাধারনের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয়ের কারনে বেড়ে গেছে সামাজিক অসন্তেুাষ আর এই সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এ বছর নিহত হয়েছেন ২২০ জন ,আহত হয়েছে ৬৫৫৩ জন। আগষ্টে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে হাঁস চড়ানোকে কেন্দ্র করে দু গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ৪০ জন ব্যাক্তি আহত হয়েছে। মে মাসে গাজীপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রেতাকে পিটিয়ে খুন করে মুদি দোকানী । জুলাই মাসে কুমিল্লায় কবরস্থানের গাছ কাটা নিযে দু পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জমি জমা , দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

রাজনৈতিক সহিংসতাঃ ২০১৬ তে রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হয়েছে ২৪২৪ জন ও নিহত হয়েছে ৬৪ জন। বেড়ে গেছে রাজনৈতিক অন্তঃকোন্দলে আহতের সংখ্যা। আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডার বানিজ্য, এলাকা দখল, চাঁদাবাজী নিয়নন্ত্রন ও ক্ষমতার দাপট প্রদর্শনের জন্য আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে আহত ১২৩৯ জন বিএনপির অন্তঃ কোন্দলে আহত হয় ৯৪ জন।

তাছাড়া এ বছর মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে আহত হয়েছে ৯২ জন ও নিহতের সংখ্যা ৪৫ জন। এসিড নিক্ষেপের শিকার হয় ৩০ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে মৃত্যুবরন করেছে ১২৫০ জন। এ বছর চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৬৫ জনের। সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে ৪৯৬৭ জন ও নিহত ২৪০৩ জন। গনপিটুনিতে মৃতু হয় ৫০ জনের আহত হয় ১০০ জন। চলতি বছর বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রনের জন্য রাজনৈতিক অজুহাতে গনগ্রেফতার হয়েছে ১৩৭৯৭ জনেরও বেশী।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা দেশের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছে এবং সেই সাথে গনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বাধীনভাবে পরিচালনা করার পরিবেশ তৈরীর জন্য সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের আহবান জানাচ্ছে।

২০১৫ এবং ২০১৬ সালের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তুলনামূলক চিত্র

মানবাধিকার পরিস্থিতির তুলনামূলক চিত্র ২০১৫ ও ২০১৬

ক্র নং

বিষয়

২০১৬

২০১৫

মন্তব্য

গণগ্রেফতার

১৩৭৯৭

১১৯৪৯

বেড়েছে

এসিড নিক্ষেপে আহত

৩০

৪৬

কমেছে

সন্ত্রাসী কর্তৃক  আহত

৮৩৯

১০৭৯

কমেছে

সন্ত্রাসী  কর্তৃক নিহত

১০৫২

৮২০

বেড়েছে

বিএসএফ কর্তৃক নির্যাতনে আহত

৩৩

৩৬

কমেছে

বিএসএফ এর গুলিতে নিহত

৩৪

৩৫

কমেছে

বিএসএফ কতৃর্ক অপহরণ

৪০

কমেছে

পারিবারিক কলহে আহত নারী ও পুরুষ

৩১৩

৩২৭

কমেছে

পারিবারিক কলহ নারী  নিহত ও পুরুষ

৩৮৪

৩৭৯

বেড়েছে

১০

যৌতুকের কারণে হত্যা

৯৪

৭৬

বেড়েছে

১১

যৌতুকের জন্য নির্যাতন

৬১

৫৩

বেড়েছে

১২

সামাজিক সহিংসতায় নিহত

২২০

২৪১

কমেছে

১৩

সামাজিক সহিংসতায় আহত

৬৫৫৩

৫২১৬

বেড়েছে

১৪

গণপিটুনিতে নিহত

৫০

১৪০

কমেছে

১৫

বোমা হামলায় নিহত

১৮

২১

কমেছে

১৬

বোমা হামলায় আহত

৩৪

২৪৭

কমেছে

১৭

সাংবাদিক নির্যাতন আহত

৩৬

৫০

কমেছে

১৮

সাংবাদিক নির্যাতন  নিহত

কমেছে

১৯

নিখোঁজ

১৮২

১৬৮

বেড়েছে

২০

 নারী ধর্ষণ

১৪১

১৩৪

বেড়েছে

২১

 ধর্ষণের পর হত্যা (নারী)

৩৩

৪৮

কমেছে

২২

 শিশু ধর্ষণ

১৫৬

১৪১

বেড়েছে

২৩

 গণধর্ষণ (নারী)

৭৭

১০৩

কমেছে

২৪

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু

২৪০৩

২৫৮০

কমেছে

২৫

বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত

৪৯৬৭

৩৬৫২

বেড়েছে

২৬

র‌্যাবের-পুলিশের সঙ্গে বন্দ–ক য–দ্ধে নিহত

১৫৭

১৫৫

বেড়েছে

২৭

পুলিশ হেফাজতে নিহত

৪৪

৩৮

বেড়েছে

২৮

চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু

৬৫

১০৪

কমেছে

২৯

লাশ উদ্ধার (নারী)

৫৭

১২৮

কমেছে

৩০

লাশ উদ্ধার (পুরুষ)

৯৪

৩১৬

কমেছে

৩১

রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত

২৪২০

৩০১০

কমেছে

৩২

রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত

৬৪

১৯৮

কমেছে

৩৩

গৃহপরিচারিকা  নির্যাতনে আহত

১৩

২৭৬

কমেছে

৩৪

গৃহপরিচারিকা নির্যাতনে নিহত

১১

১২৯

কমেছে

৩৫

অপহরণ (নারী)

৩৭

৪৯

কমেছে

৩৬

অপহরণ (পুরুষ)

২০০

৫৩৪

কমেছে

৩৭

আতœহত্যা (পুরুষ)

১৭৮

১২৬

বেড়েছে

৩৮

আতœহত্যা (নারী)

৩৩৬

২২৩

বেড়েছে

৩৯

সংখ্যালঘু নির্যাতন

৩২

২০

বেড়েছে

৪০

শ্রমিক  অসস্তোষে  আহত

৩৩২

৭৪

বেড়েছে

৪১

শ্রমিক অসন্তোষে  নিহত

১২

কমেছে

৪২

শিশু হত্যা

১৯৭

 

 

৪৩

শিশু নির্যাতন

১৯৯

 

 

৪৪

অস্বাভাবিক মৃত্যু

১২৫০

 

 

৪৫

জঙ্গি হামলা ( জঙ্গিসহ নিহত )

৬৩

 

 

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৭৯ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৪৫ ঘটনার ২০১৫ ও ২০১৬ সালের তুলনামূলক চিত্র উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় নারী ও শিশু ধর্র্ষন, আতœহত্যা, সামাজিক ও পারিবারিক সহিংসতা ও শিশু নির্যাতন ও হত্যার যা জাতির জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় ।

(তথ্য সুত্রঃ জানুয়ারী- ডিসেম্বর ২০১৬ মাসে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভন হয়নি)

মোস্তফা সোহেল আহমেদ

নির্বাহী পরিচালক

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা

 

প্রেস রিলিজ

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি- নভেম্বর ২০১৬

নভেম্বরে দেশে শিশু হত্যা ১৭, আত্মহত্যা ৬৫ ও ধর্ষণের শিকার ৫৭নারী-শিশু

নভেম্বর মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। সংস্থার মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এ চিত্র উঠে আসে। এ মাসে শিশু নির্যাতন ও হত্যা এবং ধর্ষনের ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে । এছাড়াও নারী ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আহত ও নিহত, আত্মহত্যা, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলি ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নভেম্বর মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:

ধর্ষণ ঃ নভেম্বর মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৬ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ২৪
জন। ২০ জন নারী। ৯ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হন । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে। ৩ নভেম্বর রংপুর নগরীর নার্র্সিং ইনস্টিটিউটের দুই ছাত্রীকে গণর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ভোলায় নবম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ মাসে যৌন হয়রানীর শিকার হয় ২১ জন জন নারী।

আত্মহত্যা ঃ নভেম্বর মাসে আত্মহত্যা করে ৬৫ জন । এদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ৪০ জন নারী। । শরীয়তপুরে বল্য বিয়ে থেকে মুক্তি পেতে আতœহত্যা কওে এক স্কুল ছাত্রী। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানী, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোষাক কিনতে না পারার কারনেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় ।

শিশু হত্যা ঃ নভেম্বর মাসে ১৭ শিশুকে হত্যা করা হয় । নির্যাতনের শিকার হয় ২২ জন শিশু। লালমনিরহাটে কমলা চুরির অভিযোগে দ্বিতীয় শ্রেনীর এক মাদ্রাসা শিশু শিক্ষার্থীকে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেছে এক ব্যক্তি । পটুয়াখালীতে ঘুম থেকে উঠতে দেরী করায় হাতুরী দিয়ে আঘাত করে নিজ সন্তানকে হত্যা করে এক পিতা।

যৌতুকঃ নভেম্বর মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ৭ জন নারীকে । নির্যাতনের শিকার হয় ৪ জন। যৌতুকের কারনে রাজধানীতে হুসনা নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে, মুখে বিষ ঢেলে হত্যা করে গৃহবধূর স্বামী। টাঙ্গাইলে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রেশমা বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে নভেম্বর মাসে নিহত হন ২৪ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১৮ জন ,নারী ৬ জন।। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৭ জন নারী, আহত হয় ৭ জন। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

সামাজিক অসন্তোষ ঃ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে নভেম্বরে নিহত হয়েছেন ১৫জন ! আহত হয়েছেন ৬৬২ জন। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে এক ব্যাক্তি নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটে জমি জমা, দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

খুন ঃ নভেম্বর মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ১০০ জন ও আহত হয় ৯৫ জন। কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক ও তার গাড়ী চালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে দুর্বৃৃত্তরা । পাবনায় রফিকুল নামে এক যুবলীগ কর্মীকে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা ।

অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা- নভেম্বর মাসে ২ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ৪ জন, আহত হয় ১ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ২১৬ ও আহত ২৮৮ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ২০৩ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৪,আহত হয় ১৪ জন। বোমা বিস্ফোরনে আহত ৪ জন। ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ১২ জন। এদের মধ্যে পুলিশের হাতে ৬ জন ও র‌্যাব এর হাতে ৬ জন। তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ৪ জন, আহত হয় ৪ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৭জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গনগ্রেফতার করা হয় ১৩২জনকে। এ মাসে নিখোজ হয় ১৭ জন।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

(তথ্য সুত্রঃ নভেম্বর ২০১৬ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি)

 

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি -অক্টোবর ২০১৬

= অক্টোবরে দেশে ক্রসফায়ারে ২২ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ১৮,শিশু হত্যা ১৫ ও ধর্ষণের শিকার ৪৪ নারী-শিশু =

অক্টোবর মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক কোন পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। সংস্থার মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এ চিত্র সামনে এসেছে। এ মাসে শিশু হত্যা-নির্যাতনের ও ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে । এছাড়াও নারী ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলি ছিল উল্লেখযোগ্য ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার অক্টোবর মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:

ক্রস ফায়ারে নিহতঃ অক্টোবর মাসে ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয় ২২ জনের, এর মধ্যে পুলিশের হাতে নিহত হয় ১০ জন এবং র‌্যাব কর্তৃক নিহত ১১ জন ও যৌথ বাহিনীর হাতে এক জন। এ মাসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি নিধন অভিযানে ১১ জঙ্গি নিহত হয়েছে।

ধর্ষণঃ অক্টোবর মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৪ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ১৯ জন। ১৪ জন নারী। ১০ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হন । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১ জনকে। হবিগঞ্জের বাহুবলে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে অপহরণ করে জোড়পূর্বক রাতভর গণ ধর্ষণ করে একদল র্দূবৃত্ত। দিনাজপুরে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা সারাদেশে নিন্দার ঝড় তোলে এ মাসে। তাছাড়া ১৪ জন নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে এ মাসে।

শিশু হত্যাঃ অক্টোবর মাসে ১৫ শিশুকে হত্যা করা হয় । নির্যাতনের শিকার হয় ১০ জন শিশু। সিলেটে স্বামী স্ত্রীর কলহের জেরে বাবা খুন করে তার দুই সন্তানকে। রাজধানীতে পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে এত রিক্স্রাচালকের শিশু কন্যাকে হত্যা করে পাওনাদার।

যৌতুকঃ অক্টোবর মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ৩ জন নারীকে । নির্যাতনের শিকারও হয় ৫ জন। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুইলক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য সন্ধ্যা নামে এক গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতন করেছে তার স্বামী । ঢাকার কেরানীগঞ্জে মারমীন নামের এক গৃহবধূকে যৌতুকের দাবীতে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে স্বামী।

সামাজিক অসন্তোষঃ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে অক্টোবরে নিহত হয়েছেন ১৪ জন ! আহত হয়েছেন ৩০৭ জন। শেরপুরের নকলায় টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে এক ব্যাক্তি নিহত হয়েছে। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুনামগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেড়ে ৪০ জন আহত হয়েছে। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটে জমি জমা, দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে অক্টোবর মাসে নিহত হন ১৭ জন । এদের মধ্যে পুরুষ ৯ জন ,নারী ৮জন।। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ২৬ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

আত্মহত্যাঃ অক্টোবর মাসে আত্মহত্যা করেছে ৪৬ জন । এদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ ও ২৯ জন নারী। । পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোষাক কিনতে না পারার কারনেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় ।

খুনঃ অক্টোবর মাসে দেশে সন্ত্রাসী ঘটনায় নিহত হন ১০২ জন ও আহত হয় ৯১ জন। রাজধানীর বনানীতে একটি বহুতল ভবনে ইডেন করেজের সাবেক অধ্যাপককে হাত পা ঁেবধে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা । মানিক মিয়া নামে এক পুলিশের সোর্সকে কুপিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় রাজধানীতে।

অন্যান্য ঘটনা- অক্টোবর মাসে ৫ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ৫ জন, আহত হয় ১৬ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ২৭৭ ও আহত ৪২০ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ৯৫ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৪ এবং আহত হয় ১৬ জন। তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ১ জন, আহত ৯ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৯ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গনগ্রেফতার করা হয় ৩৮৯ জনকে। এ মাসে রাজশাহী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, মৌলভিবাজার, ঝিনাইদহ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে ১৮ জন নিখোজ হয় ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন, আইনের সঠিক প্রয়োগ, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, মিডিয়ায় এসব পরীক্ষামূলক সম্প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৭৯ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। তার মধ্যে প্রতি মাসে আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা হয় । উল্লেখ্য এ মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষনা তথ্য মোতাবেক এসকল ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত ও নিহত) হয় মোট ২৩৩৩ জন নারী , পুরুষ ও শিশু।

(তথ্য সুত্রঃ অক্টোবর ২০১৬ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য।

ফাতেমা ইয়াসমিন

কমিউনিকেশন এন্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)

ফোনঃ০২-৯৫-৬৮২২৪,মোবাঃ০১৯৩৪-৭৮২৪৭৩

 

প্রেস রিলিজ

মানবাধিকার পরিস্থিতি – সেপ্টেম্বর ২০১৬

সেপ্টেম্বরে দেশে খুন ৮৫, শিশু হত্যা ২৩ ও ধর্ষণের শিকার ৩১ নারী-শিশু

সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। সংস্থার মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এ চিত্র সামনে আসে। এ মাসে শিশু হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, গণ ধর্ষণ, পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলি ছিল উল্লেখযোগ্য ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সেপ্টেম্বর মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:

ধর্ষণঃ সেপ্টেম্বর মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩১ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ১০ জন। ১০ জন নারী। ৯ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হন । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২ জনকে। মাদারীপুরে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ শেষে নদীতে ফেলে দেয়া হয়। ফরিদপুরে ধর্ষণের শিকার হয় ৭ বছরের এক শিশু। সাভারে সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বাড়িওয়ালা।

শিশু হত্যাঃ সেপ্টেম্বর মাসে ২৩ শিশুকে হত্যা করা হয় । নির্যাতনের শিকার হয় ১৫ জন শিশু। বগুরায় দুই বছরের এক শিমুকে কুপিয়ে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে ছয় মাসের শিশুকে আছাড় মেরে হত্যা করে বাবা, ঘটনাটি ঘটেছে নেত্রকোনায়। মিরপুরে ৯ বছরের এক শিশুকে গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাকা দিয়েছে তার চাচী ।

যৌতুকঃ সেপ্টেম্বের মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ৫ জন নারীকে । নির্যাতনের শিকারও হয় ৪ জন। ফেনীতে যৌতুকের দাবীতে এক গৃহবধূকে হত্যা করে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। যৌতুক দিতে না পারায় নারায়নগঞ্জে ফাতেমা বেগম নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।

ক্রস ফায়ারে নিহতঃ সেপ্টেম্বর মাসে ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয় ১০ জনের, এর মধ্যে পুলিশের হাতে নিহত হয় ৯ জন এবং র‌্যাব কর্তৃক নিহত ১ জন ।

সামাজিক অসন্তোষঃ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে সেপ্টেম্বর নিহত হয়েছেন ১২ জন ! আহত হয়েছেন ৫৫৮ জন। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তা করা নিয়ে বিরোধের জের ধরে হবিগঞ্জে ১ যুবক নিহত , আহত ১০ জন। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটে জমি জমা, দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে সেপ্টেম্বর মাসে নিহত হন ১৫ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১২ জন ,নারী ৩ জন।। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৫ জন নারী। ফরিদপুরে। নতুন মডেলের মোটর সাইকেল না পেয়ে নিজের মা বাবার শরীরে আগুন দিয়েছে এক সন্তান । পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

আত্মহত্যাঃ সেপ্টেম্বর মাসে আত্মহত্যা করেছে ৩৩ জন । এদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও ২৩ জন নারী। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানী, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোষাক কিনতে না পারার কারনেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় ।

খুনঃ সেপ্টেম্বের মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৮৫ জন ও আহত হয় ৭৯ জন। ৪ সেপ্টেম্বের বগুড়ায় এক সেলুন মালিককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বূত্তরা। টঙ্গীর গাজিপুরে বিকাশের গানম্যানকে গুলি কওে ১৬ লাখ টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে অস্ত্রধারীরা।

অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা- সেপ্টেম্বর মাসে ৭ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ১ জন, আহত হয় ৫ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ২৫০ ও আহত ৮৬৮ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ১৫২ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ১,আহত হয় ৬ জন। বোমা বিস্ফোরনে আহত ৫ জন, নিহত হয় ২ জন। তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ৫ জন, আহত ৭ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৮ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গনগ্রেফতার করা হয় ৪৭৫ জনকে। এ মাসে নিখোজ হয় ১১ জন ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, মিডিয়ায় এসব পরীক্ষামূলক সম্প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৭৯ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। তার মধ্যে প্রতি মাসে আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা হয় । উল্লেখ্য এ মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষনা তথ্য মোতাবেক এসকল ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত ও নিহত) হয় মোট ২৮৭৫ জন নারী , পুরুষ ও শিশু।

(তথ্য সুত্রঃ সেপ্টেম্বর ২০১৬ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি)

ফাতেমা ইয়াসমিন

কমিউনিকেশন এন্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)

ফোনঃ০২-৯৫-৬৮২২৪,মোবাঃ০১৯৩৪-৭৮২৪৭৩

 

প্রেস রিলিজ
দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আগষ্ট ২০১৬
আগষ্টে দেশে আত্মহত্যা ৪৭, ২৬ শিশু হত্যা ও ধর্ষণের শিকার ২৯ জন নারী-শিশু

আগষ্ট মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হয়নি বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। সংস্থার মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে এ চিত্র সামনে আসে। এ মাসে জঙ্গি হামলা ও ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য । পারিবারিক নিশংসতার বিষয়টি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা উদ্বেগজনক। এছাড়াও, শিশু ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ,পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আাহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলি ছিল উল্লেখযোগ্য এ মাসে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার আগষ্ট মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:

ক্রস ফায়ারে নিহতঃ আগষ্ট মাসে ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয় ১৯ জনের, এর মধ্যে পুলিশের হাতে নিহত হয় ১০ জন এবং র‌্যাব কর্তৃক নিহত ৮জন ও যৌথ বাহিনীর হাতে ১ জন । তাছাড়া এ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি নিধন অভিযানে ৫ জন জঙ্গি নিহত হয়।

সামাজিক অসন্তোষঃ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ৭ জন ! আহত হয়েছেন ৫৯৭ জন। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে হাঁস চড়ানোকে কেন্দ্র করে দু গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ৪০ জন ব্যাক্তি আহত হয়েছে। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটে জমি জমা, দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

ধর্ষণঃ অগষ্ট মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৯ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ১৩ জন। ৭ জন নারী। ৬ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হয় । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৩ জনকে। রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় ১১ বছরের এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। বগুড়ার শাজাহানপুরে ছিন্নমূল পরিবারের এক গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হয়। গাজীপুরে ৮ মাস বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করে ৪০ বছর বয়সী এক লোক।

শিশু হত্যাঃ আগষ্ট মাসে ২৬ শিশুকে হত্যা করা হয় । চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম চুরি দেখে প্রতিবাদ করায় এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নেত্রকোনায় স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার বলি হয় এক দেড় মাস বয়সী শিশু । রাজধানীর বাসাবো এলাকায় নিজ বাসায় দুাি ছেলে মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে মা।

আত্মহত্যাঃ আগষ্ট মাসে আত্মহত্যা করেছে ৪৭ জন । এদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ও ৩৪ জন নারী। । পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানী, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোষাক কিনতে না পারার কারনেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় । এ মাসে চাঁদপুরে মাত্র ৮০ টাকার জন্য শাস্তি ভোগের অপমান সইতে না পেরে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী আতœহত্যা করেছে।

যৌতুকঃ আগষ্ট মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ৪ জন নারীকে । নির্যাতনের শিকারও হয় ৪ জন। ধামরাইয়ে যৌতুক না পেয়ে লিপি আক্তার নামে এক গৃহবধূকে গাড়ির নিচে ফেলে হত্যা করা হয়। রাজধানীতে স্ত্রী পপি আক্তারকে যৌতুকের কারনে হত্যা করে স্বামী বিল্লাল হোসেন।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে আগষ্ট মাসে নিহত হন ১৪ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ৮জন ,নারী ৬ জন।। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ২৭ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

খুনঃ আগষ্ট মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৯০ জন ও আহত হয় ৫৮ জন। ২৫ আগষ্ট রাজধানীতে স্কুল ছাত্রী রিশাকে ছুরিকাঘাত করে এক বখাটে, পরবর্তীতে ৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিশা মারা যায়। ১৩ আগষ্ট ময়মনসিংহের যুবলীগ কর্মী পাপ্পু মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা কওে দুবৃত্তরা। কুমিল্লায় দিনে দুপুরে দুই ব্যাক্তিকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা ।

অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা- আগষ্ট মাসে ৬ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়। মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ২ জন, আহত হয় ২ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ১৩৬ ও আহত ১৯৯ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ১৮৬ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৩,আহত হয় ১০ জন। বোমা বিস্ফোরনে আহত ৫ জন, নিহত হয় ১ জন। তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ৪ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ২ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গনগ্রেফতার করা হয় ১৬৪৬ জনকে। শ্রমিক অসন্তোষে ও আন্দোলনে আহত হয় ১২ জন শ্রমিক। এ মাসে নিখোজ হয় ১৩ জন ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষন ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, মিডিয়ায় এসব পরীক্ষামূলক সম্প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৭৯ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। তার মধ্যে প্রতি মাসে আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা হয় । উল্লেখ্য এ মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষনা তথ্য মোতাবেক এসকল ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত ও নিহত) হয় মোট ৩৩৩০ জন নারী , পুরুষ ও শিশু।

(তথ্য সুত্রঃ আগষ্ট ২০১৬ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি)

ফাতেমা ইয়াসমিন
কমিউনিকেশন এন্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)
ফোনঃ০২-৯৫-৬৮২২৪,মোবাঃ০১৯৩৪-৭৮২৪৭৩

 

তারিখঃ ৩১/০৭/২০১৬

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জুলাই ২০১৬

= ক্রস ফায়ারে নিহত ২০, ধর্ষণের শিকার ২৮ জন নারী-শিশু ও পারিবারিক কলহে নিহত ১৯ =

জুলাই মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আশানুরুপ নয় বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। জুলাই মাসে জঙ্গি হামলা ও ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নিহত ও আহত, শিশু ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ,পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আাহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জুলাই মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:

ক্রস ফায়ারে নিহত ঃ জুলাই মাসে ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয় ২০ জনের, এর মধ্যে পুলিশের হাতে নিহত হয় ১৮ জন এবং র‌্যাব কর্তৃক নিহত ২জন ।

জঙ্গি হামলায় নিহত ঃ জুলাই মাসে রাজধানীর গুলশানের আর্টিজান রেস্তোরায়, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও ঝিনাইদহে জঙ্গি হামলা হয়। রাজধানীর কল্যানপুরে জঙ্গি আস্তানায় আইন শৃ্খংলা বাহিনীর অভিযানে জঙ্গি নিহতের ঘটনা ঘটে। এ নাশকতা গুলোতে জঙ্গিসহ মোট ৪৩ নিহত হয় । এর মধ্যে জঙ্গিদের হাতে ১৭ জন বিদেশী ও ৩ জন পুলিশ নিহত হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মোট ১৬ জন জঙ্গি নিহত হয় ।

সামাজিক অসন্তোষ ঃ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ১৩ জন ! আহত হয়েছেন ৬০৭ জন। সামাজিক সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুমিল্লায় কবরস্থানের গাছ কাটা নিযে দু পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জমি জমা, দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

ধর্ষণ ঃ জুলাই মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৮ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ১২ জন। ১০ জন নারী। ৫ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হয় । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১ জনকে। সৈয়দপুরে জোড় করে অপহরনের পর বাড়িতে তিনদিন আটকে রেখে এক নারীকে ধর্ষণ করে এক ভ-পীর। নারায়নগঞ্জে ১৩ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে সৎ পিতা। জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট ধর্ষনের শিকার হয় ১৯৭ জন। ধর্ষণের ঘটনা প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে।

ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ঃ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় জুলাই মাসে নিহত হয় ৭ জন এবং আহত হয় ৫৪ জন। এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক কারনে আহত হয় ৫৪৯ জন ও নিহত হন ৬ জন।

শিশু হত্যা ঃ জুলাই মাসে ১৭ শিশুকে হত্যা করা হয় । নির্যাতনের শিকার হয় আরো ৮ জন । মমনসিংহে পারিবারিক কলহের জের ধরে হত্যা করা হয় এক কিশোরকে। । নওঁগায় আরাফাত হোসেন নামে এব শিশুকে আগুনে পড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শরীতপুরেু প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ছয় মাসের এক শিশু নিহত হয়। নারায়নগঞ্জের একটি তুলা কারখানায় একজন শিশু শ্রমিককে পেটে বাতাস ঢুকিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

আত্মহত্যা ঃ জলাই মাসে আত্মহত্যা করেছে ৩৮ জন । এদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ১৭ জন নারী। বছরের প্রথম সাত মাসে মোট ২৪৯ জন আত্মহত্যা করে, সর্বোচ্চ ঢাকা বিভাগে ৭৮ জন ও সর্বনি¤œ সিলেট বিভাগে ৪ জন। ২০১৫ সালের প্রথম সাত মাসে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ২০৮টি। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানী, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোষাক কিনতে না পারার কারনেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। মুন্সীগঞ্জে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিােগে মোসলেম নামে ষাট বছরের এক বৃদ্ধের বিরদ্ধে মামলা করায় সে আতœহত্যা করে।

যৌতুকঃ জুলাই মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ১জন নারীকে । নির্যাতনের শিকার হয় ১১ জন। ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় মরিয়ম নামে এক গৃহবধকে র্নিযাতন করে স্বামীর বাড়ীর লোকজন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌতুকের দাবীতে এক গৃহবধুকে মারধর করে স্বামী।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে জুলাই মাসে নিহত হন ১৯ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ৮জন ,নারী ১১ জন।। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে এ মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৬ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

খুন ঃ জুন মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ১১৭ জন ও আহত হয় ৮৭ জন। ১৫ জুলাই টক্সগীর এরশাদ নগর এলাকায় নার্গিস বেগম নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ৫ জুলাই ৫ ঘন্টার ব্যবধানে কক্্রবাজারে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গুলি কপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা । ২১ জলাই রাজধানীতে প্রকাশ্যে এক তরুনকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

অন্যান্য সহিংসতার ঘটনাগুলোর মধ্যে, মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ৭ জন, আহত হয় ৬ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ২৩৪ ও আহত ৫২৮ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ১৩৪ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৪,আহত হয় ২০ জন। বোমা বিস্ফোরনে আহত ৫ জন, তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ৫ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৪ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গনগ্রেফতার করা হয় ৮৩৫ জনকে। শ্রমিক অসন্তোষে ও আন্দোলনে আহত হয় ২ জন শ্রমিক। এ মাসে নিখোজ হয় ৫৮ জন ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষন ও প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম স্কুল কলেজগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, মিডিয়ায় এসব পরীক্ষামূলক সম্প্রচার ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৭৯ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। তার মধ্যে প্রতি মাসে আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা হয় । উল্লেখ্য এ মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষনা তথ্য মোতাবেক এসকল ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত ও নিহত) হয় মোট ৩৫৮৯ জন নারী , পুরুষ ও শিশু।

(তথ্য সুত্রঃ জুলাই ২০১৬ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি)

ফাতেমা ইয়াসমিন

কমিউনিকেশন এন্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)

ফোনঃ০২-৯৫-৬৮২২৪,মোবাঃ০১৯৩৪-৭৮২৪৭৩

 

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জুন ২০১৬
জুন মাসে দেশে ক্রসফায়ার ২০, গণগ্রেফতার ৭৭৮৫ ও আত্মহত্যা ৫৪

জুন মাসে দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আশানুরুপ নয় বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। জুন মাসে ক্রসফায়ারে নিহতের ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন ও আইনের শাসনের পরিপন্থি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় নিহত ও আহত, শিশু ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ,পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আাহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জুন মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়:

ক্রস ফায়ারে নিহত ঃ জুন মাসে ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয় ২০ জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ১৬ জন, র‌্যাব কর্তৃক নিহত ৪ জন । ১৮ জুন মাদারীপুরে শিক্ষক হত্যাচেষ্টার মামলার অভিযুক্ত গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশ রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। পুলিশ, র‌্যাব ও যৌথ বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে যেখানে জানুয়ারী থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৩৩ জন নিহত হয় সেখানে জুন মাসেই নিহত হয় ২০ জন।

সামাজিক অসন্তোষ ঃ প্রলম্বিত বিচার পদ্ধতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এই সবকিছু মিলেই দেশের আপামর জনসাধারনের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয়ের কারনে বেড়ে গেছে সামাজিক অসোন্তুষ আর এই সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ২১ জন ! আহত হয়েছেন ৮৩০ জন। সামাজিক সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হবিগঞ্জের সুতাং রেল স্টেশনে তুচ্ছ ঘটনায় দশ গ্রাম বাসির মধ্যে সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত হয় । জানুয়ারী থেকে জুন ৬ মাসে সামাজিক সহিংসতায় আহত হয় ৩১৮৮ জন। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জমি জমা, দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

ধর্ষণ ঃ জুন মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৯ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ১০ জন। ১২ জন নারী। ৫ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হয় । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ২ জনকে। ৬ জুন যশোরে প্রতিপ্রক্ষকে ভোট দেওয়ার অপরাধে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়। ১২ জুন পটুয়াখালী বাউফল উপজেলায় মা ও মেয়েকে একসাথে গনধর্ষন করা হয়। বছরের প্রথম তিন মাসে যেখানে ৬৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষনের শিকার হয় সেখানে বিগত তিন মাসে এপ্রিল-জুন মাসে ধর্ষনের শিকার হয় ১০৩ জন।

ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ঃ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় কেন্দ্র প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় জুন’ ১৬ মাসে নিহত হয় ২০ জন এবং আহত হয় ৫৯০ জন। এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক কারনে আহত হয় ২৯০ জন ও নিহত হন ৩ জন। জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত উনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত ১৩৪ জন ও আহত ৪৯০৫ জন।

শিশু হত্যা ঃ জুন মাসে ১৩ শিশুকে হত্যা করা হয় । নির্যাতনের শিকান হয় আরো ৪ জন । লক্ষীপুরে পারিবারিক কলহের জেড় ধরে দেড় মাস বয়সী এক শিশুকে হত্যা করে শিশুটির মা । ভাঙ্গায় নিখোজ হওয়ার ৪৪ ঘন্টা পর ৪ মাস বয়সী এক শিশুর লাশ উদ্বার করা হয়। ১২ জুন চকরিয়ায় সিএনজি ট্যাক্সির ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির সময় চালকের ঘুষিতে মায়ের কোলে থাকা আট মাসের শিশুর মৃত্যু হয়।

আত্মহত্যা ঃ জুন মাসে আত্মহত্যা করেছে ৫৪ জন । এদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ২৯ জন নারী। ২৮ জন নারীর মধ্যে ২ জন গৃহকর্মী। বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ২৩৬ জন আত্মহত্যা করে, ২০১৫ সালের প্রথম ছয় মাসে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ১৯০টি। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানী, পরীক্ষায় খারাপ ফল, এমনকি পছন্দের পোষাক কিনতে না পারার কারনেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় মাদকাসক্ত পিতার উপর অভিমান করে এক দশম শ্রেনীর এক ছাত্রী কীটনাশকপানে আত্মহত্যা করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

যৌতুকঃ জুন মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ৭ জন নারীকে । নির্যাতনের শিকার হয় ১২ জন। রাজশাহীর পবায় গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বামী ও শ্বাশুড়ী । নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ীর লোকজন রানী সরকার ও সারজিদা নামে দুই গৃহবধূকে নির্মম অত্যাচার করে ।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে জুন মাসে নিহত হন ১৩ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১১জন ,নারী ২ জন।। তাছাড়া বিভিন্ন কারনে জুন মাসে স্বামীর হাতে নিহত হন ১১ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

খুন ঃ জুন মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৮৯ জন ও আহত হয় ২২ জন। ২ জুন রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আব্দুল বারেক সরদার কে নিজ ঘরে গলা কেটে হত্যা করে দুবৃত্তরা । তাছাড়া দিনে দুপুরে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুকে নির্মম ভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গীরা। প্রতিবেদন অনুযায়ী একই দিনে পৃথক ঘটনায় রাজধানীর উত্তরায় এক সেনা কর্তকর্তার বৃদ্ধ মা সহ দুইজনকে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা। একই দিনে নাটোরের খ্রিস্টান ব্যবসায়ী সুনিল গোমেজ মন্টুকে জবাই করে হত্যা করা হয় । ৮ জুন ঝিনাইদহের এক বৃদ্ধ পুরহিত আনন্দ গোপাল আনন্দ গাঙ্গওলীকে দিন দুপুরে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা। ১০ জুন পাবনায় অনুকুল চন্দ্র ঠাকুর আশ্রমের সেবাকর্মী নিত্তরঞ্জন পান্ডেকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে দূর্বৃত্তরা।

অন্যান্য সহিংসতার ঘটনাগুলোর মধ্যে, মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ২ জন, আহত হয় ২৬ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ২১২ ও আহত ২৮৪ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবসত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে, বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ৭০ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৫, বোমা বিস্ফোরনে আহত ৪ জন, তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ২ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ২ জনের। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানের নামে গনগ্রেফতার করা হয় ৭৭৮৫ জনকে। শ্রমিক অসন্তোষে ও আন্দোলনে আহত হয় ৮০ জন শ্রমিক।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে বিদ্যমান মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৭৯ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। তার মধ্যে প্রতি মাসে আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা হয় । উল্লেখ্য এ মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষনা তথ্য মোতাবেক এসকল ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত ও নিহত) হয় মোট ১০,৬১২ জন নারী , পুরুষ ও শিশু।

(তথ্য সুত্রঃ জুন ২০১৬ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভন হয়নি)

ফাতেমা ইয়াসমিন
কমিউনিকেশন এন্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)
ফোনঃ০২-৯৫-৬৮২২৪,মোবাঃ০১৯৩৪-৭৮২৪৭৩

 

তারিখঃ ৩১/০৫/২০১৬

প্রেস রিলিজ

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি মে ২০১৬

মে মাসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সহিংসতায় নিহত ৫৯, সামাজিক সহিংসতায় নিহত ৪৩ ও ধর্ষণের শিকার ২১ শিশু

দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। মে মাসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় নিহত আহত, শিশু ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ,পারিবারিক কোন্দলে আাহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মে মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়,

ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় মে’১৬ মাসে নিহত হয় ৫৯ জন এবং আহত হয় ১৩৩২ জন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে সহিংসতায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারনেই সহিংসতার ঘটনা বেশী গঠেছে বলে সংস্থা মনে করে। এছাড়াও সংস্থা মনে করে নির্বাচন কমিশনের সহিংসতার দায় এড়াতে পারে না। এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক কারনে আহত হয় ৪৮ জন ও নিহত হন ৪ জন।

সামাজিক অসন্তোষঃ প্রলম্বিত বিচার পদ্ধতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এই সবকিছু মিলেই দেশের আপামর জনসাধারনের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয়ের কারনে বেড়ে গেছে সামাজিক অসোন্তুষ আর এই সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ৪৩ জন আহত হয়েছেন ১৪৭ জন। সামাজিক সহিংসতায় মূত্যুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই মাসে ( মার্চ-এপ্রিল) সেখানে নিহত হয়েছিল ৩২ জন সেখানে বর্তমান মাসে নিহত ৪৩ জন। গাজীপুরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রেতাকে পিটিয়ে খুন করে মুদি দোকানী । বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জমি জমা , দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

ধর্ষন : মে মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে শিশু ২১ জন। যেখানে বছরের প্রথম তিন মাসে শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছিল ২০ জন। নারী ধর্ষনের শিকার হয় ৭ জন। ৮ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হয় যা বছরের তিন মাসের গড় গন ধর্ষনের দ্বিগুন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে। শিশু ধর্ষনের ২১ জন শিশুর মধ্যে ১০ জনই ঢাকা বিভাগে ধর্ষণের শিকার হয়। কুষ্টিয়ায়তে নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে এসে গণ ধর্ষণের শিকার হয় এক নারী। লক্ষীপুরে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় মায়া আাক্তার নামে এক শিশুকে।

শিশু হত্যা : মে মাসে ১৪ শিশুকে হত্যা করা হয় । নারায়নগঞ্জে আম গাছে ঢিল মারায় সাত বছরের এক শিশুকে হত্যা করে গাছের মালিক । দিনাজপুরে শিশুকন্যাকে হত্যা করে নিজে আতœহত্যা করে মা। যশোরের বেনাপোলে মুন্না নামে এক হোটেল বয়কে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ঝিনাইদহে সৎ মায়ের হাতে নিহত হয় এক শিশু। নারায়নগঞ্জে সুমাইয়া নামে এক শিশুকে পানিতে ফেলে হত্যা করে মসজিদের এক মুয়াজ্জিন ।

আত্মহত্যা : মে মাসে আত্মহত্যা করেছে ৩৫ জন । এদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ ও ২২ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকাতেই আতœহত্যা করে ৮ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ, এর মধ্যে শুধুমাত্র ঢাকা জেলায় আত্মহত্যা করে মোট ১০ জন (নারী ৪ ও পুরুষ ৬)। বাকী ঘটনাগুলো ঘটে বারশাল, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে । পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানীর কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

যৌতুকঃ এ মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ৬ জন নারীকে । ঢাকা বিভাগে যৌতুকের বলি হয়েছেন ৪ জন । নারায়নগঞ্জে স্বামী শ্বশুরের দাবিকৃত যৌতুক বাবদ অটোরিক্স্রা না দেয়ায় লাকি আক্তার নামে এক নববধূকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে মে মাসে নিহত হন ৩৪ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১২ জন, নারী ২২ জন।। এর মধ্যে বিভিন্ন কারনে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৮ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

খুন: মে মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৭৪ জন ও আহত হয় ৩৮ জন। টাঙ্গাইলে নিখিল জোয়ার্দার নামে এক দর্জিকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা । এ মাসেই বান্দরবনে এক বয়স্ক বৌদ্ধকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা ।

ক্রস ফায়ারে নিহত : মে মাসে ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ৪ জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ৩ জন, র‌্যাব কর্তৃক ১ জন । জেল হেফাজতে ৭ জনের মৃত্যু হয় যেখানে বছরের প্রথম চার মাসে নিহত হয় ১০ জন।। তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ৩ জন। সেখানে বছরের প্রথম চার মাসে সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ১০ জন।

অন্যান্য সহিংসতার ঘটনাগুলোর মধ্যে, মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ৩ জন, আহত হয় ৪ জন। সড়ক দূর্ঘটনায় এ মাসে নিহত ১৯৪ ও আহত ২৯৮ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবসত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে,বজ্রপাতে মৃত্যুবরন করেছে ১৫৭ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ১, বোমা বিস্ফোরনে নিহত ৬ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৪ জনের। বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রনের জন্য রাজনৈতিক অজুহাতে ২৪১ জন গনগ্রেফতার হয়েছে ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে বিদ্যমান মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ, অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ৭৯ ধরনের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার তথ্য সংরক্ষণ করে। তার মধ্যে প্রতি মাসে আলোচিত ও উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনার তথ্য গনমাধ্যমে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা হয় । উল্লেখ্য এ মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সার্বিক গবেষনা তথ্য মোতাবেক এসকল ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত ও নিহত) হয় মোট ২৮৫৬ জন নারী , পুরুষ ও শিশু।

(তথ্য সুত্রঃ মে ২০১৬ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভন হয়নি)

ফাতেমা ইয়াসমিন

কমিউনিকেশন এন্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)

ফোনঃ ০২-৯৫-৬৮২২৪, মোবাঃ ০১৯৩৪-৭৮২৪৭৩

 

মানবাধিকার পরিস্থিতি এপ্রিল-২০১৬

এপ্রিলে ২২ শিশু হত্যা, ধর্ষণ ৩৪ ও খুন ৮০

দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। এপ্রিল মাসে পারিবারিক কোন্দলে আাহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা ,শিশু হত্যার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার এপ্রিল মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়,

শিশু হত্যা ও নির্যাতনঃ এপ্রিল মাসে ২২ শিশুকে হত্যা করা হয় আর নির্যাতনের শিকার হয় ৭৮ জন শিশু। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে শিশুকন্যাকে শ্বাসরুদ্ধ কওে হত্যা করে মা। কুমিল্লায় হত্যার শিকার হয় এক শিশু । এ মাসে শিশু নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। সোনারগাঁয়ের এক স্কুলের ১০ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করে শিক্ষক। ঝালকাঠিতে এক মাদ্রাসা শিক্ষক প্রায় ২০ ছাত্রের চুল কেটে দেয়। বরিশালে চুরির দায়ে দুই শিশুকে গাছে বেঁধে নির্নম নির্যাতন করা হয়।

যৌতুকঃ এ মাসে যৌতুকের কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ৩ জন নারীকে। যৌতুকের কারনে নির্যাতিত হয়ে আহত হয় ৩ জন নারী। সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটায় উপজেলায় যৌতুকের কারনে আলেয়া নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করে স্বামী ও শ্বশুর । বাকীদুটো হত্যাকান্ড ঘটে বরিশাল ও পিরোজপুরে। সিরাজগঞ্জে এক গৃহবধূকে যৌতুকের দাবিতে এক স্বামী পিটিয়ে রক্তাত্ব করে। নারায়ণগঞ্জেও দুই গৃহবধূ নির্যাতনের শিকার হয়।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে এপ্রিল মাসে নিহত হন ৯ জন, আহত হন ১১ জন। তাছাড়া এ মাসে বিভিন্ন কারনে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৬ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।

ধর্ষন ঃ এপ্রিল মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৪জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ১৪ জন নারী, ১১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয় । ৬ জন নারী গণ ধর্ষণের শিকার হয় । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৩ জনকে। লক্ষীপুরে গণধর্ষণের শিকার হয় দুইবোন। সিরাজদীখান উপজেলার বারুচর ইউনিয়নে ধর্ষণের শিকার হয় এক গৃহবধূ। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা বেশী ঘটে ঢাকা বিভাগে। গণ ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা দুটো ঘটে ময়মনসিংহ ও নারায়নগঞ্জে

ক্রস ফায়ারে নিহত ঃ এপ্রিল মাসে ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ৫ জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ৩ জন , র‌্যাব কর্তৃক ২ জন । জেল হেফাজতে ৪ জনের মৃত্যু হয় বিভিন্ন কারনে। তাছাড়া ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী কর্তৃক নিহত হয় ২ জন।

আত্মহত্যা ঃ এপ্রিল মাসে আত্মহত্যা করেছে ৩৪ জন । এদের মধ্যে ১৪ জন পুরুষ ও ২০ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকাতেই আতœহত্যা করে ১১ জন নারী। বাকী ঘটনাগুলো ঘটে বারশাল, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে । পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানীর কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

খুন ঃ এপ্রিলে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৮০ জন ও আহত হয় ৫২ জন। এ মাসেই দুর্বৃৃত্তদের হাতে খুন হন রূপবান পত্রিকার সম্পাদক জুলহাস ও তার বন্ধু তনয়। ৬ এপ্রিল খুন হন জগন্নাথ হলের ছাত্র ব্লগার নাজিম উদ্দিন। পত্রিকার খবর অনুযায়ী নোয়াখালীতে চাঁদা না দেয়ায় প্রকাশ্যে শাহানারা নামে এক নারীকে বিবস্ত্র করে পিটিয়েছে জনৈক্য যুবলীগ ক্যাডার।

সামাজিক অসন্তোষঃ প্রলম্বিত বিচার পদ্ধতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এই সবকিছু মিলেই দেশের আপামর জনসাধারনের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয়ের কারনে বেড়ে গেছে সামাজিক অসোন্তুষ আর এই সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ১৪ জন ,আহত হয়েছেন ১৮৫ জন। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জমি জমা , দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

রাজনৈতিক সহিংসতা ঃ এপ্রিলে তৃতীয় দফা পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে , আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডার বানিজ্য, এলাকা দখল, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রন ও ক্ষমতার দাপট প্রদর্শনের ইউপি নির্বাচন সংঘর্ষে আহত হয় ১১৮৭ জন ও নিহত হয় ৩০ জন। অন্যান্য রাজনৈতিক কারনে আহত হয় ১১৪ জন ও নিহত হন ৩ জন।

অন্যান্য সহিংসতার ঘটনাগুলোর মধ্যে, মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ৪ জন, আহত হয় ৪ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবসত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে মৃত্যুবরন করেছে ৭৫ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৬ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৩ জনের। বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রনের জন্য রাজনৈতিক অজুহাতে ৯৮ জন গনগ্রেফতার হয়েছে ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে বিদ্যমান মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ,অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, সামাজিক সংগঠন গুলোর বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

ফাতেমা ইয়াসমিন

কমিউনিকেশন এন্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস)

ফোনঃ ০২-৯৫ ৬৮ ২২৪, মোবা ঃ ০১৯৩৪-৭৮২৪৭৩

 

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন “মানবাধিকার পরিস্থিতি জানুয়ারী – মার্চ, ২০১৬”

তিন মাসে ৬৬ ধর্ষণ, ৮৩ শিশু হত্যা ও নির্যাতন এবং আতহত্যা ১১৩

দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। এই তিন মাসে পারিবারিক কোন্দলে আাহত ও নিহত, গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা ,শিশু হত্যার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। মার্চে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে বেশ সহিংসতার ঘটনা ঘটে ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জানুয়ারী থেকে মার্চ মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়,

শিশু হত্যা ও নির্যাতনঃ গত তিন মাসে ৮৩ জন শিশু হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয় । মার্চে ২১জন শিশুকে হত্যা করা হয়।নির্যাতনের শিকার হয় ৯ জন। ফেব্রুয়ারি মাসেই শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশী। এই মাসে ৪০ জন শিশুকে নির্যাতন করা হয় । হত্যা করা হয় ২৪ শিশুকে। ১২ ফেব্রুয়ারি নাটোরের বাগাতিপাড়ার মাকুপাড়া বাজারে স্কুলপড়ুয়া তিন শিশুকে রশি দিয়ে হাত বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়। একই দিনে রাজশাহীর দুই স্কুল ছাত্রকে চুরির অপবাদ দিয়ে হাত পা বেঁধে সাত ঘন্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। রাজধানীর বনশ্রীতে নিজ দুই সন্তানকে হত্যা করে এক মা।

যৌতুকঃ গত তিন মাসে যৌতুকেন কারনে প্রাণ দিতে হয়েছে ১৭ জন নারীকে। যৌতুকের কারনে নির্যাতিত হয়ে আহত হয় ৪১ জন নারী। জানুয়ারী মাসে যৌতুকের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে ৫ জন নারীকে এবং মারাত্মক আহত হয় ৯ জন নারী । মুন্সিগঞ্জে যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে বোতল দিয়ে পিটিয়ে জখম করে এক স্বামী। । ফেব্রুয়ারি মাসে যৌতুকের জন্য প্রাণ দিয়েছেন ৬ জন নারী এবং যৌতুকের কারনে আহত হয় ২৩ জন নারী । মুন্সিগজ্ঞের গৃহবধূ রাশিদা বেগমকে যৌতুকের কারনে ব্লেড দিয়ে কেটে রক্তাক্ত করে স্বামী ও দেবর। মার্চে যৌতুকের কারনে নিহত হন ৬ ও আহত ৯ জন। খাগড়াছড়িতে গৃহবধূ মাজেদা বেগম ও তার শিশু সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পাষন্ড স্বামী ।

পারিবারিক কলহঃ পারিবারিক কলহে গত তিন মাসে নিহত হয় ৬৭ জন ও আহত হয় ৯৫ জন। তিন মাসে বেশ কিছু পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা অলোচিত হয়েছে। জানুয়ারী মাসে নিহত হয় ২৫ জন ও আহত হয় ১২ জন । পারিবারিক কলহের জের ধরে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যাক্তি নিজের ভাই বোনের তিন সন্তান কে পুড়িয়ে মারে। পারিবারিক কলহে ফেব্রুয়ারি মাসে নিহত হয় ২৮ জন ও আহত হয় ৬৯ জন । পারিবারিক কলহের জের ধরে বেয়ালমাড়িতে ভাইয়ের হাতে খুন হন বোন। তাছাড়া পাবনায় পারিবারিক কলহের কারনে এক মা ও তার সন্তানের বিষ পানে মৃত্যু হয়। মার্চে নিহত হয় ১৪ জন আহত হয় ১৪ জন। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এই সব মৃত্যু সংগঠিত হয়বলে জানা গেছে।

ধর্ষন ঃ এই তিন মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬৬ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ২৫ জন, ২০ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয় । ১৩ জন নারী হয় গণ ধর্ষণের শিকার হয় । ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৮ জনকে। মার্চে ২৪ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয় । ধর্ষিত হয় ১০ জন, শিশু ধর্ষণের শিকার হয় ৮ জন, গণধর্ষনের শিকার হয় ৩ জন ও ধষৃণের পর হত্যা করা হয় ৪ জনকে। মার্চে সেনানিবাসের ভেতর কলেজ ছাত্রী তণুকে দর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটে । ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের শিকার ২৫ জন এদের মধ্যে ৭ জন নারী, গণধর্ষণের শিকার হয় ৬ জন ও ধর্ষনের পর হত্যা করা হয় ৩ জনকে। ফেব্রয়ারিতে ৯ জন শিশুধর্ষিত হয়। পিরোজপুরে শিরিন আক্তার নামের এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষনের পর হত্যা করা করে দুর্বৃত্তরা। জানুয়ারী মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮ জন নারী,গণধর্ষণের শিকার হয় ৪ জন ও ধর্ষনের পর হত্যা করা হয় ১ জনকে।

ক্রস ফায়ারে নিহত ঃ বিগত তিন মাসে ক্রস ফায়ারে মৃত্যু হয় ২৭ জনের । মার্চ মাসে কথিত ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ৮জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ৩ জন , র‌্যাব কর্তৃক ৫জন । ফেব্রুয়ারি মাসে কথিত ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ১৩ জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ৩ জন , র‌্যাব কর্তৃক ৮ জন ও অন্যান্য বাহিনী কর্তৃক ২ জন। জানুয়ারি মাসে ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ৬ জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ৪ জন , র‌্যাব কর্তৃক ১ জন ও অন্যান্য বাহিনী কর্তৃক ১ জন।

আত্মহত্যা ঃ তিন মাসে আত্মহত্যা করেছে ১১৩ জন । এদের মধ্যে ২৫জন পুরুষ ও ৮৮ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকাতেই আতœহত্যা করে ৪৩ জন নারী। বাকী ঘটনাগুলো ঘটে বারশাল, রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরে । মার্চ মাসে আতœহত্যা করে 33 জন নারী ও 11 জন পুরুষ। ফেব্রুযারিতে আতœহত্যা করে ২৯ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ। জানুয়ারিতে আতœহত্যা করে ৭জন পুরুষ ও ২৬ জন নারী। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা ও যৌন হয়রানীর কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

খুন ঃ তিন মাসে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ২১৪ জন ও আহত হয় ২৭৫ জন। মার্চে নিহত হয় ৭৪ জন ও আহত হয় ৬৯ জন। জানুয়ারিতে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ৬৭ জন ও আহত হয় ৭৩ জন। তুচ্ছ ঘটনায় খুনের ঘটনা বেড়ে গেছে অনেক। ফেব্রুয়ারীতে সারা দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ৭৩ জন ও আহত হয় ১৪২ জন। ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ে মঠ পূজারীকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়। সিলেটে সন্ত্রাসী কর্তৃক আহত হন এক সাংবাদিক। ১১ জানুয়ারী প্রাইভেটকার ভাড়া করে গ্রামের বাড়ি গিয়ে টাকা না দিয়ে চালককে হত্যা করে পালায় তিন যুবক। কেরানীগঞ্জে হিন্দুদের এক মেলায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ঝনাটুদাস নামে এক যুবক নিহত হয়।

সামাজিক অসন্তোষঃ প্রলম্বিত বিচার পদ্ধতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এই সবকিছু মিলেই দেশের আপামর জনসাধারনের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয়ের কারনে বেড়ে গেছে সামাজিক অসোন্তুষ আর এই সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে বিগত তিন মাসে নিহত হয়েছেন ৬৭জন ,আহত হয়েছে ২০২৬ জন। জানুয়ারীতে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের এবং আহত হয়েছেন ৩৫৭ জন। বিভিন্ন কারনে সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে ফেব্রুয়ারিতে নিহত হয়েছেন ৩১ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৩২ জন। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জমি জমা , দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

রাজনৈতিক সহিংসতা ঃ রাজনৈতিক সহিংসতায় তিন মাসে আহত হয়েছে ৩৯৯ জন ও নিহত হয়েছে ১০ জন। বেড়ে গেছে রাজনৈতিক অন্তঃকোন্দলে আহতের সংখ্যা । জানুয়ারেিত পৌর নির্বাচন, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডার বানিজ্য, এলাকা দখল, চাঁদাবাজী নিয়নন্ত্রন ও ক্ষমতার দাপট প্রদর্শনের জন্য আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে আহত ১৭৫ জন বিএনপির অন্তঃ কোন্দলে আহত হয় ৩০ জন। মার্চে ইউপি নির্বাচন সংঘর্ষে আহত হয় ১৭৩৬ জন ও নিহত হয় ২৪ জন।

তাছাড়া মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে নিহতের সংখ্যা ১৩ জন, আহত হয় ১৮ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবসত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে তিন মাসে মৃত্যুবরন করেছে ১৩২ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ১৩ জনের। বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রনের জন্য রাজনৈতিক অজুহাতে তিন মাসে ১৪৫৭ গনগ্রেফতার হয়েছে ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে বিদ্যমান মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আইনের সঠিক প্রয়োগ,অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয় রোধে বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলিং, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষন, ভালো কাজের জন্য পুরষ্কার, বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম ইক্যাদির মাধ্যমে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব বলে মনে করে সংস্থাটি।

 

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

ফেব্রুয়ারিতে ২৪ শিশু হত্যা, পারিবারিক সহিংসতায় নিহত ২৮
ঢাকা, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আহত ২৫৬২ ও নিহত হয়েছেন ৪৬৫ জন । দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। পুরো মাস জুড়েই আলোচনার শীর্ষে ছিল শিশু হত্যা ও নির্যাতন । পারিবারিক কোন্দলে আাহত ও নিহতের সংখ্যাও এই মাসে তুলনামূলক বেশী। নারী নির্যাতন, আতœহত্যা পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা, কথিত ক্রস ফায়ারে মানুষ হত্যা, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার, ভারতীয় সিমান্ত রক্ষী বাহিনীর কর্তৃক নিরিহ মানুষ হত্যা গতানুগতিক ভাবেই যেন চলছে। মানুষের পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় বাড়ছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ফেব্রুয়ারি মাসের গবেষনা সেলের পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়,

শিশু হত্যা ও নির্যাতনঃ বিগত কয়েক মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসেই শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশী। এই মাসে ৪০ জন শিশুকে নির্যাতন করা হয় এর মধ্যে হত্যা করা হয় ২৪ শিশুকে। ১২ ফেব্রুয়ারি নাটোরের বাগাতিপাড়ার মাকুপাড়া বাজারে স্কুলপড়ুয়া তিন শিশুকে রশি দিয়ে হাত বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়। একই দিনে রাজশাহীর দুই স্কুল ছাত্রকে চুরির অপবাদ দিয়ে হাত পা বেঁধে সাত ঘন্টা ধওে নির্যাতন করা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশান মডেল স্কুলের চার ছাত্রকে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েছে। । ২ ফেব্রুয়ারি সদ্যভূমিষ্ঠ ছেলে সন্তানকে চারতলা বাড়ির বারান্দা থেকে ফেলে দেয় তার মা। শুধু নির্যাতন নয় বেড়ে গেছে শিশু হত্যা । ৭ ফেব্রুয়ারী নোয়াখালীর সুবর্ণচরে দুই বছরের এক শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১০ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ভালুকায় শিশু কন্যাকে হত্যার পর আতœহত্যা করে বাবা। ১৬ ফেব্রুয়ারি অপহরনের পর মুক্তিপণ না পেয়ে গাজীপুরে চার বছরের এক শিশুকে হত্যা করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের সুদ্রাটিকি গ্রাম থেকে রহস্যজনক ভাবে নিখোজ হয় ৪ শিশু, পরবর্তীতে তাদেও লাশ মাটিচাপা অবস্থায় পাওয়া যায়। কিশোরগঞ্জে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে দেড় বছরের শিশুপুত্রকে হত্যা করে মা। মাসের শেষের দিনেও কুমিল্লায় হত্যা করা হয় দুই শিশুকে।

যৌতুকঃ ফেব্রুয়ারি মাসে যৌতুকের জন্য প্রাণ দিয়েছেন ৬ জন নারী এবং যৌতুকের কারনে আহত হয় ২৩ জন নারী । মুন্সিগজ্ঞের গৃহবধূ রাশিদা বেগমকে যৌতুকের কারনে ব্লেড দিয়ে কেটে রক্তাক্ত করে স্বামী ও দেবর। তাছাড়া রাঙ্গামাটির গৃহবধূ নূর বানু ও পাবনার শম্পা বেগম ও মাত্র পঁচিশ হাজার টাকার জন্য শাহজাদপুরের নাজমা খাতুনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

পারিবারিক কলহঃ চলতি মাসে বেশ কিছু পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা অলোচিত হয়েছে। পারিবারিক কলহে চলতি মাসে নিহত হয় ২৮ জন ও আহত হয় ৬৯ জন । পারিবারিক কলহের জের ধরে বেয়ালমাড়িতে ভাইয়ের হাতে খুন হন বোন। তাছাড়া পাবনায় পারিবারিক কলহের কারনে এক মা ও তার সন্তানের বিষ পানে মৃত্যু হয়। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ, রাগ, পরকীয়া সহ বিভিন্ন পারিবারিক কারনে এসব মৃত্যু সংগঠিত হয়।

ধর্ষন ঃ এই মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২৫ জন নারী ও শিশু । এদের মধ্যে ৭ জন নারী, গণধর্ষণের শিকার হয় ৬ জন ও ধর্ষনের পর হত্যা করা হয় ৩ জনকে। এই মাসে ৯ জন শিশুধর্ষিত হয়। পিরোজপুরে শিরিন আক্তার নামের এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষনের পর হত্যা করা করে দুর্বৃত্তরা। ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষনের ঘটনা বেশী সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে।

ক্রস ফায়ারে নিহত ঃ গত মাসে কথিত ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ১৩ জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ৩ জন, র‌্যাব কর্তৃক ৮ জন ও অন্যান্য বাহিনী কর্তৃক ২ জন।

আত্মহত্যা ঃ চলতি মাসে আত্মহত্যা করেছে মোট জন ৩৬ । এদের মধ্যে ৭জন পুরুষ ও ২৯ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকা ও রাজশাহী আতœহত্যা করে ২০ জন নারী। বাকী ঘটনাগুলো ঘটে বারশাল, চট্টগ্রাম,ও খুলনায় । পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা ও যৌন হয়রানীর কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

খুন ঃ সারা দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ৭৩ জন ও আহত হয় ১৪২ জন। ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ে মঠ পূজারীকে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করা হয়। সিলেটে সন্ত্রাসী কর্তৃক আহত হন এক সাংবাদিক। তাছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জে নিজ বাড়ীতে খুন হন এক বৃদ্ধা ।

সামাজিক অসন্তোষঃ বিভিন্ন কারনে সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩১ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৩২ জন। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জমি জমা , দুই গ্রামের খেলা নিয়ে সংঘর্ষ বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

রাজনৈতিক সহিংসতা ঃ রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হয়েছে ১৭২ জন ও নিহত হয়েছে ২ জন। বেড়ে গেছে রাজনৈতিক অন্তঃকোন্দলে আহতের সংখ্যা । আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডার বানিজ্য, এলাকা দখল, চাঁদাবাজী নিয়নন্ত্রন ও ক্ষমতার দাপট প্রদর্শনের জন্য আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে আহত ১২৯ জন বিএনপির অন্তঃ কোন্দলে আহত হয় ৭ জন।

তাছাড়া মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে আহত হয়েছে ৬ জন ও নিহতের সংখ্যা ১ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে মৃত্যুবরন করেছে ৩৪ জন। এ মাসেও চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ৬ জনের। চলতি মাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রনের জন্য রাজনৈতিক অজুহাতে গনগ্রেফতার হয়েছে ৭২৫ জনেরও বেশী।

(তথ্য সুত্রঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভন হয়নি)

 

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানুয়ারী, ২০১৬

বেড়েছে শিশু অপহরণ, যৌতুকের কারনে নারী নির্যাতন, হত্যা ও আতহত্যা
অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা, নতুন দিনের স্বপ্ন নিয়ে নতুন বছরকে বরণ করেছে মানুষ। কিন্তু বছরের প্রথম মাসেই দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আহত ও নিহত হয়েছে ২৫৯২ জন পুরুষ নারী ও শিশু। দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয় বলে মনে করে দেশের অন্যতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা। পুরো মাস জুড়েই ছিল পারিবারিক কোন্দলে আাহত ও নিহতের নানা ন্যক্কারজনক ঘটনা। গৃহকর্মী নির্যাতন ও খুন, নারী নির্যাতন, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার, ভারতীয় সিমান্ত রক্ষী বাহিনীর কতিৃক নিরিহ মানুষ হত্যা। দেশের রাজনৈতিক অবক্ষয়ের সঙ্গে মানুষের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়েরও স্থলন ঘটেছে মারাত্বক ।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জানুয়ারী মাসের মনিটরিং-এ পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়,

যৌতুকঃ জানুয়ারী মাসে যৌতুকের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে ৫ জন নারীকে এবং মারাত্মক আহত হয় ৯ জন নারী । মুন্সিগঞ্জে যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে বোতল দিয়ে পিটিয়ে জখম করে এক স্বামী। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য আহত ও নিহতের সংখ্যা বেশী ঘটে ঢাকায়, মোট ৬ জন, আহত (৩) নিহত (৩)। তাছাড়া রাজশাহীতে নিহত হয় ২ জন।। যৌতুকের কারনে নারী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন যা বর্তমান আধুনিক সমাজের জন্য অত্যান্ত লজ্জাজনক।

পারিবারিক কলহঃ চলতি মাসে বেশ কিছু পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা অলোচিত হয়েছে। পারিবারিক কলহে চলতি মাসে নিহত হয় ২৫ জন ও আহত হয় ১২ জন ।পারিবারিক কলহের জের ধরে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যাক্তি নিজের ভাই বোনের তিন সন্তান কে পুড়িয়ে মারে। তাছাড়া নারায়নগঞ্জে পারিবারিক কলহের কারনে একই পরিবারের পাঁচ জনকে গলা কেটে হত্যা করে এক ব্যাক্তি।

ধর্ষন ঃ জানুয়ারী মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮ জন নারী,গণধর্ষণের শিকার হয় ৪ জন ও ধর্ষনের পর হত্যা করা হয় ১ জনকে। এই মাসে ১ জন শিশুধর্ষিত হয়। নোয়াখালীতে একই সঙ্গে ২ বোন গন ধর্ষনের শিকার হয়। নান্দাইলে বাসে চালক দ্বারা ধর্ষনের শিকার হয় এক নারী।

ক্রস ফায়ারে নিহত ঃ গত মাসে কথিত ক্রস ফায়ারের নামে মৃত্যু হয় ৬ জনের, এর মধ্যে পুলিশের ক্রস ফায়ারে নিহত হয় ৪ জন , র‌্যাব কর্তৃক ১ জন ও অন্যান্য বাহিনী কর্তৃক ১ জন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু হয় ১ জনের।

আত্মহত্যা ঃ চলতি মাসে আত্মহত্যা করেছে ৭জন পুরুষ ও ২৬ জন নারী। এর মধ্যে ঢাকাতেই আতœহত্যা কওে ১৪ জন নারী। বাকী ঘটনাগুলো ঘটে বারশাল, রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরে । পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা ও যৌন হয়রানীর কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

খুন ঃ সারা দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত ৬৭ জন ও আহত হয় ৭৩ জন। তুচ্ছ ঘটনায় খুনের ঘটনা বেড়ে গেছে অনেক। ১১ জানুয়ারী প্রাইভেটকার ভাড়া করে গ্রামের বাড়ি গিয়ে টাকা না দিয়ে চালককে হত্যা করে পালায় তিন যুবক। কেরানীগঞ্জে হিন্দুদের এক মেলায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ঝনাটুদাস নামে এক যুবক নিহত হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কর্তৃক হতাহতের সংখ্যা বেশী।

সড়ক দূর্ঘটনা ঃ সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি, অদক্ষ চালক, পরিবহন ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারনে ১৬৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে,অহত হয়েছে ৫৬৮ জন। ১০ জানুয়ারী ঘন কুয়াশার কারনে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় ভ’মিমন্ত্রীর ছেলে সহ নিহত হয় সাত জন। আহত হয় সাংবাদিক সহ ৪৬ জন।

সামাজিক অসন্তোষঃ বিচার ব্যবস্থার অবনতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এই সবকিছু মিলেই দেশের আপামর জনসাধারনের মানসিক ও মানবিক চিন্তা চেতনার অবক্ষয়ের কারনে বেড়ে গেছে সামাজিক অসোন্তুষ আর এই সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ১৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৫৭ জন। বেশীর ভাগ ঘটনাই ঘটে জমি জমা সংক্রান্ত।

রাজনৈতিক সহিংসতা ঃ রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হয়েছে ১৭৪ জন ও নিহত হয়েছে ৪ জন। বেড়ে গেছে রাজনৈতিক অন্তঃকোন্দলে আহতের সংখ্যা । বিগত পৌর নির্বাচন, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডার বানিজ্য, এলাকা দখল, চাঁদাবাজী নিয়নন্ত্রন ও ক্ষমতার দাপট প্রদর্শনের জন্য আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে আহত ১৭৫ জন বিএনপির অন্তঃ কোন্দলে আহত হয় ৩০ জন।

তাছাড়া মাদকের প্রভাবে বিভিন্ন ভাবে আহত হয়েছে ১২ জন ও নিহতের সংখ্যা ৯ জন। তাছাড়া পানিতে ডুবে, অসাবধানবসত, বিদ্যুৎপৃস্ট হয়ে মৃত্যুবরন করেছে ৫৪ জন। এ মাসেও চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ২ জনের। চলতি মাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রনের জন্য রাজনৈতিক অজুহাতে গনগ্রেফতার হয়েছে ৬৩২ জনেরও বেশী।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা মনে করে বিদ্যমান মানবাধিকার লংঘন অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হবে অন্যদিকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গিকার তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশের ভাবমূর্তি হবে। সংস্থা আরো মনে করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সবচেয়ে বেশী মানবাধিকার লংঘন হয়। সংস্থা আইন শৃংখলা বাহীনিকে আরো মানবিক আচরন করা অনুরোধ জানান।

(তথ্য সুত্রঃ জানুয়ারী, ২০১৬ মাসে দেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত কিছু ঘটনা থাকতে পারে যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভন হয়নি)

Join your hand with us for a better life and beautiful future.

Top